বাংলাদেশের আকর্ষনীয় মনোমুগ্ধকর পর্যটনস্পট চুনাতি অভয়ারন্য,ঐতিহ্যবাহী সোনারগাও ও স্বপ্নপুরী ভ্রমন বৃত্তান্ত
চুনতি অভয়ারন্য;
জীব বৈচিত্র্য সমৃদ্ধ বনাঞ্চল
নিয়ে গঠিত চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারন্য প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ঘেষে বিশাল এলাকা নিয়ে এ অবস্থান। এই অভয়ারণ্যে প্রচুর হাতি, বন্য শুকর, বানর, হনুমান, মায়া হরিণ, সাম্বার, বিভিন্ন দুর্লভ প্রজাতির পাখি
রয়েছে। ১৯৮৬ সালে ৭টি সংরক্ষিত বনভূমি নিয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ইতিমধ্যে সরকারি-বেসরকারীভাবে নয়নাভিরাম পাহাড়ের ঢালে স্থাপিত হয়েছে রেষ্ট হাউজ ও ডাকবাংলো। পর্যটকদেও কাছে বিশেষ আকর্ষণ হতে পাওে অভয়ারণ্য এলাকায় পুকুর,
গর্জনের বন, গয়ালমারা প্রাকৃতিক হ্রদ, বনপুকুর ফ্রুটটেইল, জাংগালীয়া ফ্রুটট্রেইল, পর্যটন টাওয়ার, গোলঘর, ষ্টুডেন্ট ডরমেটরী, নেচার কনজারভেশন সেন্টার, গবেষণা কেন্দ্রসহ নানা কিছু। অভয়ারন্যের সহ-ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্যরা জানান
এটিকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র গড়ার জন্য ইকোট্যুরিজমের কিছু বিশেষ আকর্ষণ বিশেষ কওে পর্যটন অবকাঠামো তৈরি করা হলে এটি দেশের অন্যতম ইকোপার্কে পরিণত হবে। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকা আয় হবে।
পদুয়া ফরেষ্ট রেঞ্জ: উপজেলার পদুয়া ফরেষ্ট রেঞ্জ অফিসের চারদিক ঘিরে রয়েছে সারি সারি বৃক্ষরাজি। বিশাল এই এলাকাটি সম্ভাবনাময় একটি পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। লোহাগাড়া বন বিভাগের অধীনে ১১শ’ হেক্টও জমির মধ্যে পদুয়া ফরেষ্ট
রেঞ্জ অফিসের চারপাশে প্রায় ৩ হাজার একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই বনাঞ্চলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের বারআউলিয়া এলাকার সামান্য পূর্বদিকে উপজেলা হাসপাতালের কাছেই এর অবস্থান। বনটির জীববৈচিত্র্য
সংরক্ষনসহ ইকোপার্ক সৃষ্টির উদ্যোগ নেয়া হলে এই এলাকাটি দেশি-বিদেশী পর্যটকদেও কাছে আরো আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। উপজেলা চেয়্যারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবূলও জানালেন সেই কথা। তিনি দু:খ করে বললেন , পর্যটনের বিপুল সম্ভাবনা
থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত সেখানে স্বয়ংস্বম্পূর্ন কোন পর্যটন কেন্দ্র স্থাপিত হয়নি। উপজেলায় চুনতিসহ এমন কিছু এলাকা আছে যেগুলোকে সহজেই পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তর করা যেতে পারে। এতে পর্যটকের সংখ্য বৃদ্ধি পাবে, সরকারেরও কোটি কোটি টাকা আয় হবে।
ঐতিহ্যের সন্ধানে সোনারগাও:
যে কোন ধর্মীয় উৎসবে যেমন ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহা এছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন জাতীয় দিবসে আনন্দ উপভোগ করতে প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাওয়ে থাকে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়।
নারায়নগঞ্জের সোনারগাও উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলো দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। দেশি বিদেশী পর্যটকরা সোনারগাওয়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখার জন্য ভিড় জমাচ্ছেন। সোনারগাওয়ের
পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন যাদুঘর, বাংলার তাজমহল, পানাম সিটি, ঈশা খার বাড়ি, পাচপীর মাজার,
গিয়াসউদ্দিন আমানত শাহের মাজার উল্লেখযোগ্য।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউণ্ডেশন ও বাংলার তাজমহলে প্রতিদিন হাজারো দেশি-বিদেশি পর্যটক ছুটে আসছেন এক নজর দেখার জন্য। আগ্রার তাজমহল নির্মাণ করে সারাবিশ্বে সম্রাট শাহাজাহান যেমন
চমক দেখিয়েছেন ঠিক একইভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মনি বাংলার তাজমহল নির্মাণ কওে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। বাংলার তাজমহলটি এক নজর দেখার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা
থেকে বিদেশী পর্যটকরা ছুটে আসছেন। এই তাজমহল দেখে পর্যটকরা আকৃষ্ট হচ্ছেন এবং বারবার ছুটে আসছেন।
ঠিক একইভাবে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন সোনারগাওয়ে লোক ও কারুশিল্প ফাউণ্ডেশন প্রতিষ্ঠা
করে বাংলার মানুষের কাছে স্মরনীয় হয়ে আছেন। ঢাকার অদূরে সোনারগাওয়ের জামপুর ইউনিয়নের পেরাব গ্রামে প্রাচীন বাংলার রাজধানী সোনারগাওয়ের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে প্রায় ৯ বিঘা জমির উপর
বাংলার তাজমহল নির্মান করা হয়। এর মাধ্যমে এলাকার শত শত বেকার যুবকদের কর্মসংস্থান হয়।
আর্থিকভাবে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে এলাকার মানুষ। পর্যটকরা জানান, সোনারগাওয়ের পর্যটন কেন্দ্রগুলো
আমাদের আকৃষ্ট করেছে,আমাদের কাছে খুবই ভালো লেগেছে। বাংলার তাজমহল নির্মাণ করার স্বপ্নের কথা জানাতে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আহসান উল্লাহ মনি বলেন, আমাদের দেশের অনেকেরই ভারতে গিয়ে
তাজমহল দেখার সাধ্য নেই। পর্যটকরা কম খরচে বাংলার তাজমহল দেখে আত্মতৃপ্তি পাবেন। তিনি বলেন, সোনারগাওয়ে ১০ হাজার ছেলেমেয়ের লেখাপড়া ও থাকার জন্য একটি পূর্নাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের
পরিকল্পনা নিয়েছি। এর ফলে সোনারগাও ও আশপাশের ছেলেমেয়েরা দূর-দূরান্তে না গিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালযে লেখাপড়া করতে পারবে। বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউণ্ডেশনের পরিচালক রবীন্দ্র গোপ জানান,
অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর পর্যটকদের উপস্থিতি অনেক বেশি। তাদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পুলিশসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করে যােেচ্ছ।
| স্বপ্নপুরী যাওয়ার এখনই সময়:
স্বপ্নময় স্বপ্নপুরীতে বেড়াতে যাওয়ার এখনই সময়। দিনাজপুর জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলার এক অসাধারন বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরী। নবাবগঞ্জ উপজেলার আফতাবগঞ্জের প্রত্যন্ত পল্লীতে প্রায় ১শ’ হেক্টও জমিতে নির্মিত
উত্তরবঙ্গেও এই মনোরম বিনোদন কেন্দ্রৃটি ১৯৮৯ সালে নবাবগঞ্জ উপজেলার কুশদহ ইউনিয়নের সাবেক ইউপি চেয়্যারম্যান, সংস্কৃতি ও প্রকৃতিপ্রেমী দেলোয়ার হোসেন ব্যাক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলেন। ১৯৯০ সাল থেকে যাত্রা শুরু করা স্বপ্নপুরীতে আছে শিশুপার্ক,
চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম ঝর্না, মিউজিয়াম, নৌবিহারের ব্যবস্থা, বিশ্রামাগার, দেশি, বিদেশী হাজারো ফুলের বাগান, সারি সারি দেবদারু গাছ, মাটিতে নেমে আসা কৃত্রিম রংধনু, শতাধিক পিকনিক কর্নার, মাটি ও দালানের তৈরি আকর্ষনীয় কটেজ
বা বা রেষ্টহাউজ। চিড়িয়াখানায় রয়েছে বাঘ, ভাল্লুক, অজগর, মদন, শকুন, বানর, বাহারি কবুতর, পাচ পায়ের গরু প্রভৃতি প্রাণী।
১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আন্দোলন ও সংগ্রামের মুর্যাল চিত্র রয়েছে বিনোদন কেন্দ্রের দেয়ালে দেয়ালে।
তদারকির জন্য নিয়োজিত শ্রমিক-কর্মচারীরা সার্বক্ষনিকভাবে আগত অতিথিদেও সেবারয় কাজ করে যাচ্ছেন। দর্শনার্থীদেও নিরাপত্তার জন্যও রয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ছায়া আচ্ছাদিত স্থানে রয়েছে মুসল্লীদেও নামাজের সুব্যবস্থা। রয়েছে স্বপ্নপুরীর মুক্তমঞ্চ।
এখানে অবস্থান কওে ফুলবাড়ি কয়লাখনি, কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রও মধ্যপাড়া কঠিন শিলা প্রকল্পও ঘুরে আসা যেতে পারে। তবে সেসব এলাকায় যেতে কর্তৃপক্ষেও পূর্বানুমতি লাগবে। আকর্ষণীয় পিকনিক স্পট হিসেবে স্বপ্নপুরী ইতিমধ্যেই উত্তরাঞ্চলের
মানুষের পাশাপাশি প্রায় সমগ্র দেশবাসীর কাছেই জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে।
প্রায় সারা বছরই শত শত মানুষ এখানে পরিবার-পরিজন নিয়ে আসেন পিকনিক করতে। তবে শীত মওসুম শুরুর সাথে সাথে পুরোদমে শুরু হয় পিকনিক পার্টিও ভিড়।
স্বপ্নপুরীকে মানুষের কাছে আরও আকর্ষণীয় কওে তুলতে কর্তৃপক্ষেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা। এই মনোরম বিনোদন কেন্দ্রে প্রায় নিয়মিতই চলচ্চিত্র, নাটক ও মিউজিক ভিডিওর স্যুটিং হচেছ। দেশ-বিদেশের অনেক গুনী রাজনৈতিক, বুদ্ধিজীবি,
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ব স্বপ্নপুরী ঘুরে গেছেন।
যাতায়াত ও প্রবেশ মূল্য: রাজধানী ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোচে নবাবগঞ্জ অথবা ফুলবাড়ী উপজেলায় গিয়ে স্বপ্নপুরীতে যাওয়া যায়। এছাড়া আন্ত:নগর তিস্তা এক্সপ্রেসে পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনে নেমে সেখানে যেতে পারেন। স্বপ্নপুরীতে প্রবেশ
মূল্য বাস-ট্রাক ৯শ’ টাকা, মাইেেক্রাবাস ৩শ’ টাকা, কার-জিপ ১৫০ টাকা, পিকআপ-মিনিট্রাক ৩শ’ টাকা, রিকশা ভ্যান ১০ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা, বাইসাইকেল ৫ টাকা এবং জনপ্রতি ২৫ টাকা। এ আয় থেকে পিকনিক
কর্নারে কর্মরত কর্মচারীদেও বেতন-ভাতা মিটিয়ে বাকিটা রক্ষনাবেক্ষন এবং সংস্কার কাজে ব্যায় করা হয় বলে জানালেন কর্তৃপক্ষ। এই প্রবেশমূল্য ছাড়াও দর্শনার্থীদেও প্রতিটি রাইডের জন্য আলাদা টাকা গুনতে হয়। স্বপ্নপুরীর বুকিং ও কটেজ ভাড়া:
পর্যটকদেও থাকার জন্য কর্তৃপক্ষ আকর্ষণীয় কটেজ বা রেষ্টহাউস তৈরি করেছেন। নীলপরী, রজনীগন্ধা, নিশিপদ্ম, চাঁদনী, সন্ধ্যাতারা ও রংধনু নামে এসব কটেজের বাড়া ৬ শ’ থেকে ১৫শ’ টাকা। ডাবল, সিঙ্গেল ও তিন রুমসহ এসব কটেজ বুকিং
ও বিস্তারিত তথ্যেও জন্য ম্যানেজারের সাথে -০১৭১২১৩৪০৯৫, ০১৭৩৮০৯৯০৬২, নম্বরে যোগাযোগ করা যেতে পারে। স্বপ্নপুরী কর্তৃপক্ষ ভবিষ্যতে এখানে একটি অত্যাধুনিক হোটেল, চাইনিজ রেষ্টুরেন্ট, মুক্তিযুদ্ধেও স্মরণে স্বতস্ত্র স্পট, ’পাখির রাজা’,
’মাছের রাজা’, রেলকার, রোপকার, বিভিন্ন ভাস্কর্য্য ইত্যাদি নির্মানের পরিকল্পনা করেছেন। স্বপ্নপুরীর সফল বাস্তবায়নে এর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেলোয়ার হোসেনকে সহযোগীতা করেছেন তারই সহোদও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর
ফিজু।
| |